স্ত্রীর বক্তব্য “তালাক দিয়ে যাচ্ছেন নাকি?” এর জবাবে স্বামীর “নে তালাক” বলার বিধান

তালাকের বিধিবিধান ,তালাক ,স্ত্রীর বক্তব্য “তালাক দিয়ে যাচ্ছেন নাকি?” এর জবাবে স্বামীর “নে তালাক” বলার বিধান

Fatwa No :
86
| Date :
2025-07-09
মুআমালাত / তালাকের বিধিবিধান / তালাক

স্ত্রীর বক্তব্য “তালাক দিয়ে যাচ্ছেন নাকি?” এর জবাবে স্বামীর “নে তালাক” বলার বিধান

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ! আমার নাম জুয়েল এবং আমার স্ত্রী তানিয়া। গত ১৭ তারিখ রাতে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। স্ত্রী আমাকে সহবাস করতে নিষেধ করে। এই নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সহবাসের মাঝপথে আমি বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই। তখন আমার স্ত্রী পিছন থেকে ডেকে বলছিল "তালাক দিয়ে যাচ্ছেন নাকি?" আমি রাগের মাথায় বলি "নে তালাক" তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমি আরো দু'বার "তালাক" বলি। তবে এখন আমি নিশ্চিত না যে আমি ২ বার বলেছিলাম নাকি ৩ বার। এখন আমরা সংসার করতে চাই। এখন আমার
প্রশ্ন হচ্ছে ১. এই তালাক কি শরীয়তের দৃষ্টিতে কার্যকর হয়েছে?
২. যদি কার্যকর হয় তাহলে কি আমাদের পুনরায় একত্রে থাকা সম্ভব?
৩. এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
অনুগ্রহ করে কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে বিস্তারিতভাবে উত্তর দিন।

الجوابُ حامِدا ًو مُصلیِّا ً وَمُسَلِّمًا

বিবাহেচ্ছুক প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য বিবাহ-তালাক ও দাম্পত্য সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে শরীয়তের মৌলিক বিধান জেনে নেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে অবহেলা করা গুনাহ। উপরন্তু এ বিষয়ে অবহেলা সংসার জীবনে অনেক সময় কঠিন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই গুনাহ ও বিপদ উভয় থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন পরিমাণ হলেও শরীয়তের বিধান জেনে নেওয়া কর্তব্য। ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক, তাদের মাঝে গভীর ভালোবাসা বিশেষভাবে কাম্য। কেননা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রভাব পরিবার, সংসার, সন্তানসহ আরো অনেক কিছুর উপর পড়ে। আর কোনো সন্দেহ নেই যে, দাম্পত্য হলো দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক দৃঢ় ও উন্নত হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আন্তরিকতা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে একে অপরকে ছাড় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।এমনকি তা কখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তালাক পর্যন্ত গড়ায়। উল্লেখ্য, শরীয়তে তালাক মোটেও কাম্য নয়। এ জন্যই শরীয়তে তালাককে বৈধ কাজের মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ বলা হয়েছে। আর তালাক এমন স্পর্শকাতর বিষয়। যা বলে ফেললে আর বাতিল করা যায় না এবং লিখিত কিংবা মৌখিক, স্ত্রীকে শুনিয়ে কিংবা না শুনিয়ে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, এমনকি ঠাট্টাচ্ছলে, রাগান্বিত অথবা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়। তাই শরীয়ত কর্তৃক নির্দেশিত প্রন্থায় স্ত্রীকে সতর্ক ও সংশোধন করার যেসব পদ্ধতি রয়েছে পর্যায়ক্রমে সেসব প্রয়োগ না করেই তালাক দেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে কখনো তালাক দিলেও যেহেতু বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য এক তালাকই যথেষ্ট। তাই কোনো পরিস্থিতিতেই তিন তালাক না দেওয়া কর্তব্য। কেননা তিন তালাক দিলে আর স্বাভাবিকভাবে বিবাহের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। উপরন্তু এ কারণে অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় থাকে না। আর যারা বলে একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক পতিত হয়, রাগান্বিত কিংবা গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে তালাক পতিত হয়না ইত্যাদি, তাদের এসব কথা সম্পূর্ণ ভুল ও কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি। তাই এসব কথা কর্ণগোচর করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে সামাজিক লজ্জা ও পারিবারিক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার চেয়ে পরকালের আজাব অনেক কঠিন।
প্রশ্নোল্লিখিত "নে তালাক" এবং পরবর্তীতে "তালাক" দুইবার বলার দ্বারা শরীয়তের দৃষ্টিতে তিন তালাক পতিত হয়ে প্রশ্নকারী এবং তার স্ত্রী একে অপরের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গেছে। তাই তালাকের পর থেকে তাদের পরস্পরের মাঝে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক। এবং পূর্বের ন্যায় দেখা-সাক্ষাৎ, মেলামেশা তথা স্বামী- স্ত্রী সুলভ সকল প্রকার আচরণ তাদের জন্য হারাম। এখন প্রশ্নকারীর জন্য তার স্ত্রীর ইদ্দত কালীন সময়ের তথা তালাকের পরবর্তী তিন মাসিক শেষ হওয়া পর্যন্ত, আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত, আর উভয়ের কোনটি না হলে তিন মাস পর্যন্ত খোরপোষ দেওয়া এবং মহর (আংশিক কিংবা পূর্ণ) আদায় না করে থাকলে তা আদায় করা ওয়াজিব। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এখন তাদের পুনর্ববিবাহ বৈধ নয়। তবে যদি তিন তালাকের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর প্রশ্নকারীর স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্কও হয়, তারপর ওই স্বামী মারা যায় বা কোন কারণে তাকে তালাক দেয়, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর তালাক বা মৃত্যুজনিত ইদ্দত পালনের পর প্রশ্নকারী ও তার স্ত্রী উভয়ে সম্মত থাকলে নতুন ভাবে মহর নির্ধারণ করে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ করতে পারবে। উপরোল্লিখত পদ্ধতি ছাড়া প্রশ্নকারী ও তার স্ত্রীর ঘর-সংসার করার অন্য কোনো পথ বৈধ নয়।

مأخَذُ الفَتوی

قال الله تعالى : فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرُهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ الله يبينها لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ﴾ (سورة البقرة، الأية : ٢٣٠)-
و في الجامع لأحكام القرآن لابن العربي في تفسير الآية الماضية : اعلم أنه لم يثبت عن أحد من الصحابة ولا من التابعين ولا من أئمة السلف المعتد بقولهم في الفتاوى في الحلال والحرام شيئ صريح في أن الطلاق الثلاث بعد الدخول يجب واحدة إذا سيق بلفظ واحد (ج:4، ص:240، ط: رشدية)-
وفي صحيح البخاري : عن عروة بن الزبير أن عائشة أخبرته: «أن امرأة رفاعة القرظي جاءت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت: يا رسول الله، ‌إن ‌رفاعة ‌طلقني ‌فبت ‌طلاقي، وإني نكحت بعده عبد الرحمن بن الزبير القرظي، وإنما معه مثل الهدبة، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لعلك تريدين أن ترجعي إلى رفاعة؟ لا حتى يذوق عسيلتك وتذوقي عسيلته. (‌‌باب من أجاز طلاق الثلاث، ج 7، ص 42، رقم: 5260، ط: السلطانية)-
وفي سنن الترمذي : عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " ‌ثلاث ‌جدهن ‌جد، وهزلهن جد: النكاح، والطلاق، والرجعة الخ (‌‌باب ما جاء في الجد والهزل في الطلاق، ج 3، ص 482، رقم : 1184، ط: مطبعة مصطفى البابي، مصر)-
و في الهداية: وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة أو ثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها ‌أو ‌يموت ‌عنها) ‌والأصل ‌فيه ‌قوله ‌تعالى {فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره} والمراد الطلقة الثالثة، والثنتان في حق الأمة كالثلاث في حق الحرة؛ ( كتاب الطلاق، باب الرجعة ، ج٣، ص٢٢٦، ط:مكتبة البشرى)-
وفي بدائع الصنائع : و أما الطلقات الثلاث فحكمها الأصلي هو زوال الملك، وزوال حل المحلية أيضا حتى لا يجوز له نكاحها قبل التزوج بزوج آخر؛ لقوله عز وجل فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره، وسواء طلقها ثلاثا متفرقا أو جملة واحدة الخ ( فصل وأما حكم البائن، ج 4، ص: 407، ط: رشيدية)-
وفي الفقه الإسلامي وأدلته : والبائن بينونة كبرى هو الذي لا يستطيع الرجل بعده أن يعيد المطلقة إلى الزوجية إلا بعد أن تتزوج بزوج آخر زواجاً صحيحاً، ويدخل بها دخولاً حقيقياً، ثم يفارقها أو يموت عنها، وتنقضي عدتها منه. وذلك بعد الطلاق الثلاث حيث لا يملك الزوج أن يعيد زوجته إليه إلا إذا تزوجت بزوج آخر. ( كتاب الطلاق، ج:9، ص:6956، دار الفكر، دمشق)-

واللہ تعالی أعلم بالصواب
حسين أنور عُفی عنه
دار الإفتاء الجامعة البنورية الإسلامية

Fatwa No 86 Verify Now
1     96
Related Fatawa Related Fatawa
...
Related Topics Relative Topics